বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। আদমশুমারি ও গৃহ গণনা ২০১১-এর হিসাব অনুযায়ী, ২০১২ সালের ১৬ জুলাই দেশের অনুমিত লোক সংখ্যা ১৫ কোটি ২৫ লক্ষ ১৮ হাজার ১৫ জন। মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮০ ভাগ মানুষ গ্রামে বাস করে। ‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিক রিভিউ ২০১১'-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী জাতীয় অর্থনীতিতে কৃষিখাতের অবদান ২০%, শিল্পখাতের ৩০% ও সেবাখাতের অবদান ৫০%। কিন্তু জনসংখ্যার দ্রুত হারে বৃদ্ধির প্রবণতা, অর্থনৈতিক অনগ্রসরতা ও চাহিদার তুলনায় কর্মসংস্থানের সীমিত সুযোগের জন্য দেশের বেকার সমস্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদন-২০১০-এর মতে, বাংলাদেশে মোট কর্মহীন লোকের সংখ্যা ২৬ লক্ষ। দেশের মোট শ্রম শক্তির পরিমাণ ৫ কোটি ৬৭ লক্ষ, যাদের এক- তৃতীয়াংশ হচ্ছে যুবক-যুবতী। বিশাল কর্মক্ষম বেকার জনগোষ্ঠীকে মজুরি ও বেতনভিত্তিক চাকরির মাধ্যমে কাজে লাগানো সম্ভব নয়। প্রয়োজন আত্মকর্মসংস্থান। এ অধ্যায়ে আমরা আত্মকর্মসংস্থানের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জানতে পারব।
এ অধ্যায় শেষে আমরা-
ক. i ও ii
খ. i ও iii
গ. ii ও iii
ঘ. i, ii ও iii।
এসএসসি পাস হাফিজুর রহমান ২০০০ সালে জাহাজে কাজ শুরু করেন। ছোট চাকরি, খাটুনি অনেক। কিন্তু বেতন অনেক কম। সংসার চলছিল না। বাধ্য হয়ে তাকে জাহাজের চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে গ্রাম ফিরে আসতে হয়। ঔষধ কোম্পানিতে চাকরি নেয়ার অনেক চেষ্টা করে তিনি ব্যর্থ হন। ডিগ্রি পাসের সনদ না থাকায় চাকরি মেলেনি। তবে পরিশ্রমী হাফিজুর দমে যাননি। বাড়ির আশপাশে পতিত জমি নিয়ে কিছু একটা করার কথা ভাবতে থাকেন। উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে শুরু করেন পতিত জমিতে করলা চাষ ৷ সপ্তাহে এখন তার ক্ষেতে ৭ মণ করলা ফলে। করলার আয় দিয়েই হাফিজুরের ছয় সদস্যের পরিবারের ভরণপোষণ চলছে স্বাচ্ছন্দ্যে। পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ার মাটিভাঙ্গা গ্রামের শিক্ষিত চাষি হাফিজুর রহমান করলার পাশাপাশি নানা রকম সবজি আবাদ করে বেকারত্ব ঘুচিয়ে এখন স্বাবলম্বী, দারিদ্র্যকে করেছেন জয়।
হাফিজুর জানান, এবার তিনি ২ একর জমিতে নানা ধরনের সবজির আবাদ করেছেন। অর্ধেক জমিতে হাইব্রিড টিয়া প্রজাতির করলা চাষ করেছেন। অন্য জমিতে পুঁইশাক, বরবটি, কুমড়া, বেগুন, চিচিঙ্গা, ঢেঁড়সসহ নানা সবজির আবাদ করেছেন। প্রতি কেজি ৩০ টাকা দরে স্থানীয় পাইকারদের কাছে তিনি করলা বিক্রি করে আসছেন। পাইকারি ক্রেতারা তার ক্ষেতে এসে করলা কিনছেন। এ বছর করলা বিক্রি করে তিনি প্রায় ৩ লাখ টাকা আয় করবেন বলে আশাবাদী। তবে করলা আবাদে ৫৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। হাফিজুর একজন উদ্যমী কৃষক তাই সে সফল হয়েছে। এ ব্যাপারে কৃষি অফিসের নারায়ণ চন্দ্র মজুমদার বলেন, হাফিজুরের সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে অনেকেই সবজি আবাদে মনোনিবেশ করছেন। যে কোনো বেকার যুবকের জন্য বিষয়টি অনুকরণীয় ।
এই যে জনাব হাফিজুর রহমান নিজের দক্ষতা ও গুণাবলি দ্বারা নিজেই নিজের কর্মসংস্থান করেছেন এটাই আত্মকর্মসংস্থান। এখন আমরা বুঝতে পারছি যে, নিজস্ব পুঁজি অথবা ঋণ করা স্বল্প সম্পদ, নিজস্ব চিন্তা, জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে ন্যূনতম ঝুঁকি নিয়ে আত্ম প্রচেষ্টায় জীবিকা অর্জনের ব্যবস্থাকে আত্মকর্মসংস্থান বলে। জীবিকা অর্জনের বিভিন্ন পেশার মধ্যে আত্মকর্মসংস্থান একটি জনপ্রিয় পেশা। বিভিন্ন খুচরা বিক্রয়, রেডিও ও টেলিভিশন মেরামত, হাঁস-মুরগি পালন, মৌমাছি চাষ ইত্যাদি আত্মকর্মসংস্থানের আওতাভুক্ত।
ব্যবসায় উদ্যোগের সাথে আত্মকর্মসংস্থানের সম্পর্ক খুব নিবিড়। আত্মকর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তি নিজের কর্মসংস্থানের চিন্তা করে কাজে হাত দেন। একজন আত্মকর্মসংস্থানকারী ব্যক্তি তখনই একজন উদ্যোক্তায় পরিণত হবেন, যখন তিনি নিজের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি সমাজের আরও কয়েকজনের কর্মসংস্থানের চিন্তা নিয়ে কাজ শুরু করেন, ঝুঁকি আছে জেনেও এগিয়ে যান এবং একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। সে ক্ষেত্রে সকল ব্যবসায় উদ্যোক্তাকে আত্মকর্মসংস্থানকারী বলা গেলেও সকল আত্মকর্মসংস্থানকারীকে ব্যবসায় উদ্যোক্তা বলা যায় না ।
নোয়াখালীর সানজিদা ইসলাম স্থানীয় কলেজ থেকে স্নাতক পাস করেও যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি লাভে ব্যর্থ হন। বেশ কিছু দিন বেকার থাকার পর তিনি স্থানীয় যুব উন্নয়ন কার্যালয় থেকে ফুল চাষের উপর প্রশিক্ষণ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। প্রশিক্ষণ শেষে এক একর জমিতে ফুল চাষ করেন। প্রথম মৌসুমে তার আয় হলো ৫০ হাজার টাকা। লাভের টাকা পেয়ে তার আগ্রহ বহুগুণে বেড়ে গেল। এরপর তিনি ঢাকায় গিয়ে ফুল চাষের উপর দিনব্যাপী কর্মশালায় যোগ দিলেন ও পুষ্পমেলা ঘুরে দেখলেন। এখান থেকে তিনি নতুন দেশি বিদেশি জাতের ফুলের বীজ নিয়ে চাষ করে অনেক আয় করলেন। কঠোর পরিশ্রম আর সুযোগের সঠিক ব্যবহারের কারণে তার ব্যবসায় ৫ বছরে অনেক বড় আকার ধারণ করে। তিনি সম্প্রতি তার জেলার সেরা নারী উদ্যোক্তার পুরস্কার পান। পুরস্কার গ্রহণকালে তিনি আগত সবাইকে আত্মকর্মসংস্থানের নিম্নোক্ত প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে অবগত করেন—
আত্মকর্মসংস্থানের অনুপ্রেরণায় নিজ মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় চালিত যে কোনো ক্ষুদ্র ব্যবসায় নিয়োজিত থেকে যেমন সম্মানজনক জীবিকা উপার্জন করা যায়, তেমনি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও অবদান রাখা যায়। চাহিদা আছে এমন পণ্য উৎপাদন ও বিক্রয় করে বা সেবাদান করে অর্থ উপার্জন করা যেতে পারে।
সবসময় খেয়াল রাখতে হবে, আমাদের যে সকল সম্পদ রয়েছে তার সঠিক ব্যবহার করে কীভাবে সম্মানজনক জীবিকা উপার্জন করা যায়। এ সব বিষয় বিশ্লেষণ করে আমরা আত্মকর্মসংস্থানের বেশ কিছু উপযুক্ত ও লাভজনক ক্ষেত্র চিহ্নিত করতে পারি। আত্মকর্মসংস্থানের উপযুক্ত ও লাভজনক ক্ষেত্র-
আত্মকর্মসংস্থানমূলক ব্যবসায় পরিচালনার ক্ষেত্রে সাফল্য ও ব্যর্থতা অনেকাংশে নির্ভর করে আত্মকর্মসংস্থানের উপযুক্ত ক্ষেত্র নির্বাচনের উপর। তাই আত্মকর্মসংস্থানের উপযুক্ত ক্ষেত্র নির্বাচনের সময় নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর দিকে লক্ষ রাখা প্রয়োজন ।
ব্যবসায়ের স্থান নির্বাচন
ব্যবসায়ের স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে কাঁচামালের সহজলভ্যতা,বাজারজাতকরণের সুবিধা, অবকাঠামোগত সুবিধা প্রভৃতি বিষয়ের প্রতি লক্ষ রাখা প্রয়োজন।
সঠিক প্রযুক্তি ব্যবহার
উৎপাদন প্রক্রিয়ায় সঠিক প্রযুক্তি ব্যবহার এবং প্রয়োজনবোধে স্থানীয় ও আমদানিকৃত প্রযুক্তির সংমিশ্রণ ব্যবসার সাফল্য অর্জনের পথ সুগম করে। ব্যবসা শুরু করার পূর্বে উদ্যোক্তাদের এ বিষয়টির উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা প্রয়োজন ।
দেশের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে অবহিত থাকা
দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ব্যবসায়ের সাফল্যকে প্রভাবিত করে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদেরকে দেশের চলমান আর্থ- সামাজিক অবস্থা সম্যকভাবে অবহিত থাকতে হয় এবং সে আলোকে ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যবসায় ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হয়। অধিকন্তু ব্যবসায় সাফল্য লাভ করতে হলে যে সব বিষয় ব্যবসায় কার্যাবলিকে প্রভাবিত করে সে সব বিষয় সম্বন্ধে অবহিত থাকতে হবে ।
ব্যবসায় ঝুঁকি মোকাবেলায় উপায় অবলম্বন
ব্যবসা সংক্রান্ত ঝুঁকি আগেই নিরূপণ করে তার মোকাবেলা করার কৌশল স্থির করে রাখলে অনিশ্চয়তাজনিত ক্ষতির হাত থেকে ব্যবসাকে রক্ষা করা যায়। কাজেই উপযুক্ত পদ্ধতির মাধ্যমে ব্যবসায় ঝুঁকি নিরূপণ ও তা মোকাবেলার উপায় নির্ধারণ ব্যবসায় সাফল্য লাভের অন্যতম শর্ত ।
ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা গ্ৰহণ
ব্যবসায় একবার ব্যর্থ হলে ব্যর্থতার কারণগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে বিশ্লেষণ করে হতাশ হওয়ার পরিবর্তে শিক্ষা গ্রহণ করে নতুনভাবে কাজ শুরু করার মধ্যে ব্যবসায়ের সাফল্য নিহিত।
সুষ্ঠু ব্যবসা পরিকল্পনা প্রণয়ন
ব্যবসায় সফলতা অর্জনের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সঠিক ব্যবসা পরিকল্পনা প্রণয়ন। ব্যবসায়ে হাত দেওয়ার পূর্বেই ব্যবসার কাজ কখন এবং কীভাবে করা হবে তা অগ্রিম চিন্তা করে ঠিক করাই হচ্ছে পরিকল্পনা। ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে পরিকল্পনা হচ্ছে দিকনির্দেশনা দলিল। পরিকল্পনা প্রণয়ন যত বেশি সমৃদ্ধ হবে ব্যবসায়ে সফল হওয়ার নিশ্চয়তাও তত বেশি হবে।
আত্মকর্মসংস্থানের জন্য প্রয়োজন ব্যক্তিগত দক্ষতা ও স্বনির্ভর পেশায় নিয়োজিত থেকে জীবিকা অর্জনের প্রবল ইচ্ছা শক্তি। যেহেতু দেশে চাকরির সুযোগ সীমিত এবং ইচ্ছা করলেই সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে এত অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব নয় তাই একমাত্র বিকল্প হচ্ছে নিজেই নিজের কর্মসংস্থান করা। কিন্তু এ দেশের যুবসমাজের নিকট আত্মকর্মসংস্থানের ধারণা স্বচ্ছ ও যথেষ্ট নয়। অন্যদিকে দীর্ঘদিনের সামাজিক মূল্যবোধ ও পুঁথিগত পড়াশুনার কারণে যুবসমাজ জীবিকা বলতে চাকরিকে বুঝে থাকে। ফলে শিক্ষিত-অশিক্ষিত নির্বিশেষে বেকারের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বর্তমানের যুব ও তরুণসমাজ ও আগামী প্রজন্মকে আত্মকর্মসংস্থানে উদ্বুদ্ধ করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। যেমন-
যে সমাজ ও দেশে উদ্যোক্তার সংখ্যা যত বেশি, সে সমাজ বা দেশ অর্থনৈতিকভাবে তত উন্নত। বাংলাদেশে আত্মকর্মসংস্থানে সহায়তাকারী বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান আছে। এ সকল সংস্থা ভূমিহীন, বিত্তহীন জনগণকে আত্মকর্মসংস্থানমূলক কাজ গ্রহণে উদ্বুদ্ধকরণ, দক্ষতা উন্নয়নের প্রশিক্ষণ দান, ক্ষুদ্র ব্যবসায় স্থাপনের জন্য ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান, ঋণ ব্যবহার তত্ত্বাবধান প্রভৃতি কার্যক্রমের মাধ্যমে দুস্থ লোকদের আয়ের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট, মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ পল্লি উন্নয়ন বোর্ড, গ্রামীণ মহিলাদের কর্মসংস্থানের প্রকল্প, যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্ৰ, নট্রামস উল্লেখযোগ্য। নিম্নে এগুলোর কার্যক্রম ব্যাখ্যা করা হলো-
১. বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজম্যান্ট (Bangladesh Institute of Management )
বাংলাদেশ ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউট শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। নির্দিষ্ট ফি-এর বিনিময়ে এটি আত্মকর্মসংস্থান ও উদ্যোগ উন্নয়নের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। প্রধান প্রধান কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ক্ষুদ্র শিল্প স্থাপন প্রক্রিয়া ও ব্যবস্থাপনা, নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠাকরণ, মহিলা উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রভৃতি ।
২. মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয় (Ministry of Women Affairs )
মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয় মূলত মহিলাদের জন্য উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে। বিশেষ করে গ্রামের দুস্থ, শিক্ষিত, অর্ধ-শিক্ষিত মহিলাদেরকে স্বকর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়া এর মূল উদ্দেশ্য। এটি উদ্যোগী মহিলাদের কারিগরি দক্ষতা উন্নয়নের লক্ষ্যে অনানুষ্ঠানিক কারিগরি ও প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে।
৩. বাংলাদেশ পল্লি উন্নয়ন বোর্ড (Bangladesh Rural Development Board)
বাংলাদেশ পল্লি উন্নয়ন বোর্ড বা বিআরডিবি গ্রামের দুস্থ ও ভূমিহীন নারী-পুরুষদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে যাতে প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর তারা স্বাধীনভাবে একটি পেশা বেছে নিয়ে উপার্জন করতে পারে। দেশের সকল জেলা ও উপজেলায় বিআরডিবির কার্যক্রম বিস্তৃত।
৪. গ্রামীণ মহিলাদের কর্মসংস্থান প্রকল্প (Employment Generation Project of Rural Women)
এ প্রকল্পের মাধ্যমে পল্লি অঞ্চলের মহিলাদেরকে বিভিন্ন পেশায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এবং প্রশিক্ষণ শেষে তাদের মধ্যে ঋণ বিতরণ করা হয়। শুধুমাত্র প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরাই ঋণ পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হয়।
৫. যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (Youth training centre) যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিচালিত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। দেশের প্রতিটি থানায় এর কেন্দ্র রয়েছে। এ সকল কেন্দ্রের মাধ্যমে বেকার যুবক-যুবতীদেরকে বিভিন্ন পেশায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, যেমন- হাঁস মুরগির খামার তৈরি, মৎস্য চাষ,সবজি বাগান, নার্সারি করা, সেলাইয়ের কাজ, কুটির শিল্পের কাজ, কম্পিউটার চালনা প্রভৃতি। এ সকল বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রশিক্ষণার্থীরা আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ পায়।
৫. নট্রামস (Notrams):
নট্রামস শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন ধরনের কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ও কম্পিউটার চালনা শিক্ষা দেওয়াই এ প্রতিষ্ঠানের প্রধান কাজ। এ প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেও বহু শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতী আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ করে নিয়েছে। পরিশেষে বলা যায়,আলোচ্য প্রতিষ্ঠানসমূহ বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গ্রহণ করে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। তাদের এ কার্যক্রমের ফলশ্রুতিতে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে।
৬. এনজিও (NGO):
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন এনজিও বেকার যুব সমাজকে জীবন ও জীবিকা সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকে । যেমন ব্রাক, আহাছানিয়া মিশন, প্রশিক্ষণ ইত্যাদি ।
কোনো বিশেষ কাজ যথার্থভাবে সম্পাদন করার স্বার্থে এবং জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ একান্ত প্রয়োজন। প্রশিক্ষণ কর্মদক্ষতা ও যোগ্যতা বৃদ্ধি করে। বড় প্রতিষ্ঠানের ন্যায় ক্ষুদ্রায়তন প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা করা উচিত। নিয়োগ পদ্ধতি ও প্রশিক্ষণের একটি সুস্পষ্ট কর্মসূচি থাকলে অভিজ্ঞ ও যোগ্য কর্মীর জন্য বাইরে থেকে কর্মী নিয়োগের প্রয়োজন পড়ে না। প্রশিক্ষণ হলো সর্বস্তরের কর্মীদের জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধি এবং মানসিকতা বিকাশের অবিরাম ও নিয়মিত প্রচেষ্টা যাতে তাদের যোগ্যতা ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং প্রতিষ্ঠানটিও লাভবান হয়। কোনো কর্মীকে সঠিক কাজে নিয়োগ করার পূর্বে তাকে প্রশিক্ষণ বা ট্রেনিং দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এ প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তাসহ নতুন ও পুরাতন সকল কর্মীর জন্যই অপরিহার্য। নিম্নে প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করা হলো :
পরিশেষে বলা যায়, কর্মীর দক্ষতা ও যোগ্যতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের কার্য নির্বাহের জন্য প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। নতুন ও পুরাতন উভয় প্রকার কর্মীকেই উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তুলতে না পারলে তাদের দিয়ে ভালো কাজ আশা করা যায় না। তাই কর্মীদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে উপযুক্ত করে গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠানের আবশ্যকীয় কর্তব্য।
আরও দেখুন...